কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘নির্বাচন আমরা অবশ্যই চাই। কিন্তু নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন করতে হবে। একটা নতুন খসড়া তৈরি করতে হবে। সেই খসড়ার আলাপ আলোচনা করার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি এন্ড পিস স্টাডিজের আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, বিএনপি অনেক দায়িত্বশীলভাবে কথা বলবে। বাংলাদেশে বর্তমানে আমরা যে দুর্বল মুহূর্তে পড়ে গেছি, এই সময় বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল; তাদের কাছে অনেক বেশি দায়িত্ব আমরা আশা করি। বিএনপি কেন চুপ্পুকে রাখতে চায় আমি কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না।
এটার কোন সাংবিধানিক যুক্তি এবং রাজনৈতিক যুক্তি নেই।
তিনি আরো বলেন, ‘এই তথাকথিত ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে ঢুকানোটাই ভুল ছিল। এই ভুলটা সংশোধন করার উপায় হচ্ছে প্রথমত চুপ্পুকে অপসারণ করা এবং একই সঙ্গে ঘোষণা দেওয়া, আমরা শুরুতে ভেবেছিলাম সাংবিধানিকভাবে আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারব। কিন্তু রাষ্ট্রপতি যখন আমাদের বললেন, তার কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ পত্র নেই; তিনি (রাষ্ট্রপতি) আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
তার ওইখানে থাকার কোনো অধিকার নেই। তাকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সেনাপ্রধানের সাপোর্টের কারণে এই সরকার এখনো টিকে আছে। সেনাপ্রধান যদি এই সরকারকে সমর্থন না করেন তাহলে সরকার মুহূর্তের ভেতরেই পড়ে যাবে। তার শুভবুদ্ধির ওপর ভিত্তি করে এটা দাঁড়িয়ে আছে।
আমরা সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার চাই না। আমাদের সৈনিকরাও চায় না। সৈনিকরা গুলি করতে অস্বীকার করেছিল বলে এই গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। শ্রমিকদের অভিপ্রায়ের সঙ্গে আমরা এখানে যারা উপস্থিত আছি আমাদের অভিপ্রায় মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চাই, যে রাষ্ট্র জনগণের অভিপ্রায়কে প্রতিনিধিত্ব করে। জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিনিধিত্ব হবে তখন, যখন আমরা চুপ্পুকে অপসারণ করব। এবং তারা স্বীকার করবে আমরা ভুল করেছি, ভুল হতেই পারে; তবে আমরা শুধরাতে চাই। এখন আমাদেরকে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে ঘোষণা করুন। আমরা অধ্যাদেশ হতে চাই না। একটু সাবধানে থাকতে হবে। তারা কিন্তু আবার পুরনো সংবিধানের নামে অধ্যাদেশ করার চেষ্টা করবে। আমরা কোনো অধ্যাদেশ মানব না।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের একটাই প্রধান দায়িত্ব। সেটা হলো এই দেশকে একটি নতুন গঠনতন্ত্র অথবা একটি কনস্টিটিউশন উপহার দেওয়া। নতুন গঠনতন্ত্র কী করে হবে তা করার জন্য আপনাদের আমাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। জনগণের অভিপ্রায় আপনাদের জনগণের কাছে এসেই শুনতে হবে। আমরা পরস্পরে আলাপ-আলোচনা করে একটা জায়গায় আসব যেটা জনগণের সমষ্টির অভিপ্রায়।’
তিনি আরো বলেন, এই পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা ইলেকশন করাটা হলো একটি বাজার ব্যবস্থা ব্যবসা। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইলেকশন কখনো গণতন্ত্রকে রিপ্রেজেন্ট করে না। নির্বাচনের সময় ভোট কেনাবেচা করে এটা তো জনগণের অভিপ্রায় নিশ্চিত হবে না। আমরা চেয়েছি, জনগণের অভিপ্রায় নিশ্চিতকরণ। যাদের কাছে টাকা আছে বিশেষ করে লুটেরা মাফিয়া শ্রেণি তারাই এই ইলেকশনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাবে। আমি আপনি কেউ রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে অংশগ্রহণ করতে পারব না। এখন আমাদেরকে এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে যেখানে সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে। সেই নীতি আমাদের সংবিধানে এখনো আছে। সংবিধানের ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্রের সব প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধির দ্বারা প্রশাসন চলবে। প্রশাসন এক জিনিস ক্ষমতা আরেক জিনিস। ক্ষমতা সব সময় তৈরি হয় জনগণের দ্বারা।’
আপনার মতামত লিখুন :